---Advertisement---

বাবা মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত কবি মোহাম্মদ রফিক

By Admin

Updated On:

Follow Us
---Advertisement---

প্রতিনিধি:- কাজী নূর (বাংলাদেশ)বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের চিতলী বৈটপুর গ্রামে বাবা মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন একুশে পদক প্রাপ্ত কবি মোহাম্মদ রফিক। আজ সোমবার (৭ আগস্ট) বেলা ১১টায় চিতলী বৈটপুর এলাকায় ‘উদ্দিপন বদর সামছু বিদ্যা নিকেতন’ প্রাঙ্গনে জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। 

এর আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল থেকে ঢাকায় নেয়ার পথে রোববার (৬ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে কবি মোহাম্মদ রফিক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দুই ছেলে, নাতীরনাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন কবি মোহাম্মদ রফিক।

মোহাম্মদ রফিকের জানাজা নামাজে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নী জেনারেল বশির আহমেদ, কবির বোন জামাই শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আমিনুল হক, কবির বোন গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সেলিনা পারভীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সবিতা ইয়াসমিন, কবির ভাই প্রকৌশলী মোঃ শফিক, কবির ছোট ছেলে অধ্যাপক ড. শুদ্ধস্বত্ত্ব রফিক, অধ্যাপক প্রশান্ত মৃধা, সামছউদ্দিন নাহার ট্রাস্টের প্রধান সমন্বয়ক সুব্রত কুমার মুখার্জী, কবির বিভিন্ন স্বজনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, উদ্দিপন বদর সামছু বিদ্যা নিকেতনসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ কবির গুনগ্রাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

কবির ভাই প্রকৌশলী মোঃ শফিক বলেন, আমাদের আট ভাইবোনদের মধ্যে কবি মোহাম্মদ রফিক ভাই সবার বড় ছিলেন। তিনি শুধু আমাদের বড় ভাই ছিলেন না, তিনি আমাদের সকলের অভিভাবক ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা অভিভাবক শূন্য হলাম।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মোমিনুল ইসলাম বলেন, স্যার একজন ভাল মানুষ ছিলেন। দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। দেশের জন্য তার কলম চলত সব সময়। স্যারের অবদান ভোলার নয় দাবি করেন সাবেক এই শিক্ষার্থী। জানাজা নামাজ ও দাফন শেষে বাবার জন্য সকলকে দোয়া করার অনুরোধ করেন কবির ছোট ছেলে অধ্যাপক ড. শুদ্ধসত্ত্ব রফিক।

ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন ও কবিতায়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে কাব্যিক রসদ যুগিয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন কবি মোহাম্মদ রফিক।

কবি মোহাম্মদ রফিক ১৯৪৩ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের বৈটপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সামছুদ্দীন আহমদ এবং মা রেশাতুন নাহারের আট সন্তানের মধ্যে মোহাম্মদ রফিক ছিলেন সবার বড়। মোহাম্মদ রফিকের শৈশব কাটে বাগেরহাটে। মাধ্যমিক পাস করে ঢাকার নটরডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন, কিন্তু পরে ঢাকা কলেজে মানবিক বিভাগে চলে যান। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

মোহাম্মদ রফিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় পাকিস্তানের সামরিক শাসন বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। পাকিস্তানের সামরিক আদালত তাকে দশ বছরের কারাদন্ড দেয়। কিন্তু এম. এ. পরীক্ষার জন্য ছাড়া পান। ১৯৭১ সালে প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের ১ নম্বর সেক্টরের কর্মকর্তা হিসেবে এবং পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করেন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন মোহাম্মদ রফিক। দীর্ঘ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি।

 

কবি মোহাম্মদ রফিক ২০০৯ সালের ২৯ জুন অবসরে যান। অবসরের পর তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বসবাস শুরু করেন। দীর্ঘদিন যাবত বার্ধক্যজনিত রোগসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন কবি। গেল সপ্তাহে কবির ছোট ছেলে অধ্যাপক ড. শুদ্ধসত্ত্ব রফিকের সাথে কবি গ্রামের বাড়িতে যান।

 

গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের চিতলীতে অবস্থানকালে রোববার (৬ আগস্ট) সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। প্রথমে বাগেরহাট এবং পরে বরিশালে নেয়া হয় কবিকে। বরিশালের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষার পর কবির হার্টের সমস্যাসহ বেশ কিছু শারীরিক জটিতলা ধরা পড়লে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা রওনা হওয়ার পর পথে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি মোহাম্মদ রফিক।

মোহাম্মদ রফিক ঢাকায় থাকলেও, এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, পৈত্রিক ভিটায় সকল ভাইবোনরা মিলে সামছউদ্দিন নাহার ট্রাষ্ট নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। মোহাম্মদ রফিক সামছউদ্দিন নাহার ট্রাষ্টি বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি আমৃত্যু সামছউদ্দিন নাহার ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন।

১৯৭০ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বৈশাখী পূর্ণিমা’ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৬ সালে প্রকাশ পায় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধুলার সংসারে এই মাটি’। মোহাম্মদ রফিক একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ পুরস্কার, জেমকন সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘কপিলা’, ‘খোলা কবিতা, ‘গাওদিয়া’, ‘মানব পদাবলী’, ‘আত্মরক্ষার প্রতিবেদন’ ’ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।